বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম আধুনিক করা হচ্ছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চলমান শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি সংশোধন, আন্তর্জাতিক মান ও সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে এ পরিবর্তন আনার উদ্যোগ দিয়েছে সরকার।
শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা এবং শ্রেণিকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রীর খসড়া মৌখিকভাবে অনুমোদন দিলেও সোমবার (৩০ মে) এ নতুন কারিকুলাম চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)।
বিদ্যমান ও নতুন শিক্ষাক্রমের পার্থক্য কী?
এনসিটিবি সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাক্রমে
শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয়, একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সমন্বিতভাবে অর্জিত হলে তার যোগ্যতা গড়ে ওঠে।
বিষয়টিকে উদাহরণ দিয়ে এনসিটিবি বলেছে, একজন শিক্ষার্থী
একটি গাড়ি কীভাবে চালাতে হয়, তা যখন বই পড়ে বা শুনে বা
দেখে জানতে পারে, তখন তার জ্ঞান অর্জিত হয়। ওই শিক্ষার্থী
যদি গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্র হাতে-কলমে পরিচালনা করতে শেখে, অর্থাৎ
সামনে, পেছনে, ডানে-বাঁয়ে চালাতে
পারে, ব্রেক করতে পারে, তখন তার
দক্ষতা তৈরি হয়। আর যদি ওই শিক্ষার্থী গাড়ি চালিয়ে নিজের ও রাস্তার সব মানুষ,
প্রাণী ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছানোর সক্ষমতা
অর্জন করে, তখন তার গাড়ি চালনার বিষয়ে যোগ্যতা অর্জিত হয়।
প্রাক্-প্রাথমিক দুই বছর
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা হবে দুই বছর
মেয়াদি,
যা চার বছর বয়সী শিশুদের দিয়ে শুরু করে ছয় বছর পর্যন্ত চলবে।
প্রাক্-প্রাথমিকে দুটি শ্রেণি থাকবে। একটি হবে প্রাক্-প্রাথমিক প্রথম শ্রেণি এবং
প্রাক্-প্রাথমিক দ্বিতীয় শ্রেণি। বর্তমানে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এক বছর মেয়াদি
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। আর ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে
ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
কমছে বিষয়
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি
পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও
যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং
সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরা শেখাবেন। প্রাথমিকের জন্য আটটি বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে।
এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত,
বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
এর মধ্যে ‘ভালো থাকা’ এবং ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বিষয়ে আলাদা বই থাকবে না। এগুলো
শিক্ষকেরা শেখাবেন, যার জন্য নির্দেশনামূলক বই দেওয়া হবে।
আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি
অভিন্ন বই পড়ানো হবে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে মাধ্যমিকে ১২ থেকে ১৪টি বই
পড়ানো হয়। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন বই পড়তে হয়। আর নবম শ্রেণিতে শাখা
বিভাজন হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তন হবে।
কবে থেকে নতুন বই
এনসিটিবির সূত্রমতে,
২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি;
২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি;
২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন
শিক্ষাক্রম।
এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং
দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
যেভাবে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন
প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণির আগে স্কুলে কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই
ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৭০
শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা)। একইভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে
৬০ শতাংশ শিখনকালীন এবং ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। নবম ও দশম শ্রেণিতে ৫০
শতাংশ শিখনকালীন ও ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।
পাবলিক পরীক্ষা
দশম শ্রেণিতে গিয়ে হবে পাবলিক পরীক্ষা। শুধু দশম শ্রেণির
পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। দশম শ্রেণির মোট ১০টি বিষয়ের মধ্যে ৫টির
পরীক্ষা হবে এসএসসিতে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। বাকি পাঁচটি
বিষয়ের মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির
ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয়। এখন গড়ে ৩২ কর্মদিবস লাগে এসএসসি পরীক্ষা নিতে। নতুন
সিদ্ধান্ত পাঁচ কর্মদিবসেই পরীক্ষা শেষ হবে।
শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমিকে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ৬টি বিষয়ে ১২টি পত্র থাকবে। একাদশ
শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজি এবং
ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী যে শাখায় পড়বে, সেই শাখার প্রতিটি বিষয়ের প্রথম পত্রের (মোট তিনটি) পরীক্ষা হবে।
অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে মোট ছয়টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে। আর দ্বাদশ শ্রেণিতে নিজ
নিজ শাখার তিনটি বিষয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্রের মোট ছয়টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা
হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতি শাখার তিনটি বিষয়ের প্রতিটির জন্য তিনটি পত্র থাকবে।
দুই পরীক্ষার সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হবে।
বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি ছাড়াও পঞ্চম শ্রেণি শেষে
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে জুনিয়র স্কুল
সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা হয়। এনসিটিবির
একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দশম শ্রেণির আগে কোনো
পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়ার কথা বলেছেন।
সপ্তাহে ছুটি দুদিন, জাতীয় দিবসে খোলা
নতুন শিক্ষাক্রমে সরকারি ছুটির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও
শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকবে। তবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং
বিজয় দিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে। এই দিবসগুলোতে সব শিক্ষার্থীকে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে হবে, কিন্তু ক্লাস হবে না। দিবসের
তাৎপর্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি থাকবে, যেগুলো
ধারাবাহিক মূল্যায়নে যুক্ত হবে।
আরো বিস্তারিত জানতে ভিডিও টি দেখতে পারেনঃ
শিক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য, সরকারি-বেসরকারি চাকুরির বিজ্ঞপ্তি, চাকুরি প্রস্তুতি, প্রযুক্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ খবর, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন পরীক্ষার রুটিন, সরকারি বৃত্তি ও উপবৃত্তি, জানা অজানা সব খবর ও পাঠক কলামের মজার মজার গল্প,কবিতা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি Follow করে রাখুন।
ইউটিউবে এসাইনমেন্ট,এসাইনমেন্টের উত্তর,শিক্ষার সকল আপডেট,চাকুরির প্রস্তুতির শর্ট টেকনিক পেতে Talukdar Academy ইউটিউব চ্যানেলটি Subscribe করে রাখুন।